vegetable-waste

ফেলা জিনিস ফেলনা নয়

জীবন আর রান্না — এই দুটো জিনিসেই একটা কথা মিলে যায়, কবির ভাষায় বললে ‘জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা।’ রান্নাঘরেও কিন্তু কিছুই ফেলা যায় না। অনেকেই বলেন, ‘ওয়েস্ট (Waste) ইজ বেস্ট (Best)’— আর সেটা রাঁধতে জানলেই বোঝা যায়। খোসা, দানা, ছিবড়ে— ফল বা সব্জির এই ফেলে দেওয়া অংশগুলোই হয়ে উঠতে পারে সুস্বাদু খাবারের মূল উপকরণ। আলু থেকে কড়াইশুটি, মোচা, কাঁঠাল কিংবা নারকেল—এই সব কিছুরই এমন কিছু অংশ থাকে যেগুলো আমরা সাধারণত ফেলে দিই। অথচ একটু কৌশলে, একটু সৃজনশীলতায় সেগুলো দিয়েই বানানো যায় অসাধারণ পদ। এই যেমন ধরুন, কড়াইশুটির খোসা। ওটা না ফেলে চমৎকার একটা স্যুপ তৈরি করা যায়। আলুর খোসা ভাজাটা যদি ঠিকমতো রাঁধতে পারেন, তবে সেটা হয়তো আলুর মূল পদগুলোর থেকেও বেশি সুস্বাদু হয়ে উঠবে। মোচার খোসা আবার একটু ভারি ধরনের হয়। অনেক সময় মনে হয়, পুরো টাকাটাই বুঝি খোসার পেছনেই খরচ হয়ে গেল! তখন খোসা ফেলতেও মায়া লাগে। এবার থেকে আর ফেলা নয়—মোচার খোসা দিয়েই বানিয়ে ফেলুন দারুণ ‘মোচার খোসার পকোড়া’খেয়ে সবাই আঙুল চাটবে, তারিফ করবে। কাঁঠাল দানার চচ্চড়ি এতটাই লোভনীয় হতে পারে যে, কাঁঠাল কেনার সময় আপনি শুধু দানার দিকটাই দেখতে শুরু করবেন। আর নারকেলের ছিবড়ে? নাঃ, ওটাও আর ফেলার জিনিস নয়। বরং সেটা দিয়ে বানিয়ে ফেলুন ঘরোয়া স্টাইলে ‘নারকেল ছিবড়ের বড়া’

এই দুর্মূল্যের বাজারে খাবার নষ্ট নয়, বরং ‘অপচয়ের’ অংশগুলোকেই কাজেf লাগান। কেমন করে? রইল তারই হালহদিশ। 

Recipe

কড়াইশুটির খোসার স্যুপ

উপকরণ–

কড়াইশুটির খোসা– ৫০০ গ্রাম, কড়াইশুটি– ১/২ কাপ, দুধ– ১/২ কাপ, জল– ২ কাপ, মাখন– ১ চামচ, নুন স্বাদমতো, গোলমরিচ গুঁড়ো– ১/২ চামচ, চিলি ফ্লেক্স সামান্য, ফ্রেশ ক্রিম– ১ চামচ।

প্রণালী—

প্রথমে কড়াইশুটিগুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে (কড়াইশুটি ছাড়ানোর সময় খোসার দু’দিকের শিরা ফেলে দিতে হবে)।

এবার খোসাগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ঈষৎ উষ্ণ গরম জলে আধঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। আধঘন্টা পর সেই খোসাগুলো আরও একবার ধুয়ে নিতে হবে। এবার প্যানে কড়াইশুটি, কড়াইশুটির খোসা, দুধ, জল, স্বাদমতো নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো এবং মাখন দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে মাঝারি আঁচে ঢাকা দিয়ে ১৫ মিনিট মতো রাখতে হবে। এরপর কড়াইশুটি এবং কড়াইশুটির খোসা সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে একটু ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। এবারে ওই মিশ্রণটা মিক্সিতে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর প্যানে আরও একটু মাখন গরম করে ছেঁকে নেওয়া মিশ্রণটা দিয়ে নাড়তে হবে, বেশ ঘন হয়ে এলে সামান্য চিলি ফ্লেক্স দিয়ে মিশিয়ে সার্ভিং বোলে ঢেলে, ওপরে ফ্রেশ ক্রিম এবং কয়েকটা কড়াইশুটি ছড়িয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে কড়াইশুটির খোসার স্যুপ।

potato recipe

আলুর খোসা ভাজা

উপকরণ–

আলুর খোসা (একটু মোটা করে ছাড়ানো )– ৫-৬ টা আলুর, বেসন– ১ কাপ, কালোজিরে– ১/২ চা-চামচ, পোস্ত– ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, কাঁচালঙ্কা কুচি– ২-৩ টে, খাবার সোডা–১ চিমটি, বিটনুন — ১/২ চা-চামচ, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী–

প্রথমে আলুর খোসাগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটা পাত্রে নিয়ে তাতে একে একে বেসন, কালোজিরে, পোস্ত, হলুদগুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা কুচি, খাবার সোডা ও স্বাদমতো নুন দিয়ে খুব ভালো করে হালকা হাতে মেখে নিতে হবে। তারপর প্যানে সাদা তেল গরম করে তাতে ওই মেখে রাখা আলুর খোসা অল্প অল্প করে ছাড়তে হবে এবং কম আঁচে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবারে সার্ভিং প্লেটে রেখে ওপর থেকে বিটনুন ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।

Bengali Recipe

মোচার খোসার পকোড়া

উপকরণ—

মোচার খোসা (ভেতরের দিকের নরম খোসা)– ৮-১০ টা, তেঁতুল গোলা জল (মাঝারি মাপের বাটি)– ১ বাটি, কর্ণফ্লাওয়ার– ৩-৪ চামচ, ডিম– ১ টা, আদাবাটা– ১ চা-চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা– ২-৩ টে, গোলমরিচ গুঁড়ো– ১ চা-চামচ, খাবার সোডা–১ চিমটি, ধনেপাতাকুচি– ১-২ চামচ, ভাজা বাদাম (সামান্য থেঁতো করে নেওয়া)– ৩-৪ চামচ, চাট মশলা– ১/২ চা-চামচ, নুন স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী–

মোচা খুব সরু সরু করে কেটে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটা পাত্রে তেঁতুল গোলা জল নিয়ে তাতে ১০-১৫ মিনিট সরু সরু করে কাটা মোচার খোসাগুলো ভিজিয়ে রাখতে হবে (এতে মোচার কালো কষ ভাবটা চলে যাবে)। এরপর তেঁতুল গোলা জল থেকে তুলে ভালো করে আরও একবার ধুয়ে রাখতে হবে। এবার অন্য একটা পাত্রে ডিম, আদাবাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, স্বাদমতো নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, এক চিমটি খাবার সোডা দিয়ে খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। ফেটানো হয়ে গেলে সরু সরু করে কেটে রাখা মোচা, বাদাম, ধনেপাতাকুচি আর কর্ণফ্লাওয়ার দিয়ে হালকা হাতে মেখে নিতে হবে। তারপর প্যানে সাদা তেল গরম করে তাতে ওই মেখে রাখা মোচা অল্প অল্প করে ছাড়তে হবে এবং কম আঁচে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবারে সার্ভিং প্লেটে রেখে ওপর থেকে চাট মশলা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।

jack fruit

কাঁঠাল দানার চচ্চড়ি

উপকরণ–

পুঁইশাক– ৫০০ গ্রাম, কাঁঠাল দানা– ২০০ গ্রাম, আলু (মাঝারি মাপের)– ২ টো, কুমড়ো– সরু ১ ফালি, পাচ ফোড়োন– ১/২ চা-চামচ, শুকনো লঙ্কা– ১ টা, হলুদগুঁড়ো– ১/২ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো– ১ চা-চামচ, জিরেগুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, ধনেগুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, নুন ও চিনি স্বাদমতো, সর্ষের তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী–

প্রথমে পুঁইশাক কেটে ভালো করে ধুয়ে ভাপিয়ে, জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। তারপর আলু আর কুমড়ো ডুমো ডুমো করে কেটে ধুয়ে নিতে হবে। এবার কাঁঠাল দানার খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক করে কেটে ধুয়ে রাখতে হবে। তারপর কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে একে একে আলু, কুমড়ো, কাঁঠাল দানা ভেজে তুলে নিতে হবে। এরপর ওই তেলেই পাচ ফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিতে হবে, সুগন্ধ বের হলে সমস্ত ভাজা সব্জি এবং ভাপানো পুঁইশাক দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এরমধ্যে একে একে হলুদগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, স্বাদমতো নুন আর অল্প জল দিয়ে মশলাটা একটু কষে নিতে হবে। মশলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করলে গোলমরিচ গুঁড়ো ছড়িয়ে মিশিয়ে নিতে হবে এবং সব্জি সিদ্ধ হওয়ার মতো অল্প জল দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে। বেশ কিছুক্ষণ পরে জল শুকিয়ে গেলে সামান্য চিনি আর ১/২ চামচ মতো কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে ভালো করে মিশিয়ে নামিয়ে নিতে হবে (এই রান্নাটা একটু শুকনো শুকনো হবে)। এবারে সার্ভিং প্লেটে গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে।

coconut recipe

নারকেল ছিবড়ের বড়া

উপকরণ–

নারকেলের ছিবড়ে (মালাইকারি অথবা অন্য কোনও রান্না করার সময় আমরা নারকেল কুড়িয়ে দুধ বের করে নেওয়ার পর নারকেলের যে অংশটা ফেলে দিই, সেটার কথা বলা হয়েছে)– ২ কাপ, ময়দা– ১ কাপ, ছোটোএলাচ গুঁড়ো– ১/২ চা-চামচ, কিশমিশ– ২-৩ চামচ, কাজুবাদাম কুচি– ২-৩ চামচ, নুন– ১ চিমটি, চিনি স্বাদমতো, ভাজার জন্য সাদা তেল প্রয়োজনমতো।

প্রণালী–

প্রথমে একটা বড় আকারের পাত্রে নারকেলের ছিবড়ে, ময়দা, ছোট এলাচ গুঁড়ো, নুন ও স্বাদমতো চিনি দিয়ে খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে এবং ১৫ মিনিট মতো ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে (একটুও জল দেওয়া যাবে না)। ১৫ মিনিট পর ঢাকা খুলে আরও একবার খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে (চিনি গলে গেলে মাখতে সুবিধা হবে, প্রয়োজনে সামান্য জল দেওয়া যেতে পারে)। এবারে ওই মণ্ড থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে ভেতরে কিশমিশ আর কাজুবাদাম কুচি ভরে হাতের সাহায্যে চ্যাপ্টা আকারের গড়ে নিতে হবে। সবগুলো তৈরি হয়ে গেলে, প্যানে সাদা তেল গরম করে তাতে ওই নারকেলের বড়াগুলো ছাড়তে হবে এবং কম আঁচে সোনালি করে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবারে সার্ভিং প্লেটে রেখে পরিবেশন করতে হবে।